সাফল্য বাড়াতে নিজের পরিকল্পনা লেখার অভ্যাস গড়ুন।

আপনার যেকোন ‘লক্ষ্য’ পূরণের সম্ভাবনা ৪২ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে যায়, যখন আপনি সেটির পুরো পরিকল্পনা কোথাও লিখে রাখেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের একটি জরীপের তথ্য এমনটাই বলছে। ডোমিনিকান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান বিভাগ মানুষের কাজ করার ধরণ নিয়ে এমন একটি জরীপ করেছে। এই জরীপে দেখা গেছে, যেসব মানুষ তাদের পরিকল্পনা কোথাও লিখে রাখেন তারা সেই কাজটি শেষ করতে অন্যদের তুলনায় ৪২ ভাগ বেশি সফল হন। অর্থাৎ যারা নিজের লক্ষ্য কোথাও লিখে না রেখে কেবল মাথায় নিয়ে ঘুরেছেন, তারা অনেকেই কাজ শেষে আশানুরূপ ফল পান না।

কাজের সফলতা বেড়ে যাওয়ার এই পুরো প্রক্রিয়াটি আসলে আমাদের মস্তিকের সঙ্গে জড়িত। ধারণা করা হয়, আমাদের মস্তিস্কের ডান দিকটি সৃজনশীলতা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে আর বাম দিকের অংশ আমাদের কৌশলগত ধারণা ও যুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর তাই আপনি যখন আপনার পরিকল্পনার কথা শুধু ‘চিন্তা’ করেন তখন আপনার মস্তিস্কের বাম দিক, অর্থাৎ লেফট হ্যামিস্ফিয়ার কার্যকর থাকে। কিন্তু একই সঙ্গে আপনি যখন সেটি কোথাও লিখতে শুরু করেন তখন আপনার মস্তিস্কের ডান দিকের লেফট হ্যামিস্ফিয়ারও সচল হয়। এভাবে মস্তিকের উভয় অংশের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের ফলে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনি কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে যান। এই সহজ কৌশলটি অনেক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সি,ই,ও আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ব্যবহার করেন। তারা তাদের বিশাল দায়িত্ব আর প্রতিদিনের কাজগুলো ডায়রিতে বা অন্য কোথাও নোট করে রাখেন। তাই তাদের পরিকল্পনাগুলো গোছানো থাকে।

দিনের শুরুতেই আমরা যদি নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে নেই, তাহলে আমাদের কাজের মনোযোগ অনেকাংশে বেড়ে যায়। যদিও এভাবে নিজের পরিকল্পনা লেখার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই নেই। যেমন, এক গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা মাত্র ২০ ভাগ মানুষ তার পরিকল্পনা লিখে রাখতে অভ্যস্ত। থ্রি এম (3M) কোম্পানির এক গবেষণায় দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনকিছু পরিকল্পনা করতে যে সময় লাগে তার চেয়ে ছবি দেখে ৬০ হাজার গুণ দ্রুত সেটি চিন্তা করা সম্ভব। সেকারণেই কোনকিছু একবার লিখে ফেললে সেটি একবার দেখেই আপনি পরবর্তী পরিকল্পনা দ্রুত ঠিক করে ফেলতে পারেন। এছাড়াও লেখালিখির আরও ৫টি সুবিধা উল্লেখযোগ্য:

কাজের পরিকল্পনা লিখে রাখার ১ম সুবিধা

লিখিত পরিকল্পনা আপনার কাজের অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে দেয়। এটিই এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা। আপনি যখন নতুন নতুন লক্ষ্য স্থির করবেন, তখন সেটি পূরণের জন্য বাড়তি তাগিদ অনুভব করবেন। যদিও দিনের সব ঘটনা আপনার পরিকল্পনা মাফিক না-ও হতে পারে, তবে নিজের পরিকল্পনাটি লেখা থাকলে আপনি প্রতিদিন কতটুকু কাজ আগাতে পারছেন সেই হিসেব সবসময় পরিষ্কার থাকে। ফলে আপনি একটু একটু করে আপনার লক্ষ্যের কাছে পৌঁছতে পারেন।

কাজের পরিকল্পনা লিখে রাখার ২য় সুবিধা

বন্দুকের গুলি লক্ষ্যভেদ করার জন্য যেমন এর নিশানা ঠিক রাখা জরুরী তেমনি আপনার লক্ষ্য যখন নির্দিষ্টভাবে লিখিত থাকে তখন আপনি নিশ্চিত থাকেন আপনাকে ঠিক কোন পথে এগোতে হবে। ফলে অন্য কোন চিন্তা মাথায় আসার সম্ভাবনা কমে যায়। রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় যেমন ট্রাফিক সাইন আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে তেমনি আপনার কাজের পরিকল্পনা কোথাও লেখা থাকলে আপনিও ঠিক পথে চলতে পারেন। তাই লিখিত পরিকল্পনা আমাদের কাজে আরও মনযোগী করে তোলে এবং আপনার চলার পথকে সুগম করে।

কাজের পরিকল্পনা লিখে রাখার ৩য় সুবিধা

কাজের চিন্তা যখন সারাদিন আপনার মাথায় ঘুরাপাক খায় তখন সেটি আপনার ওপর মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আপনি কাজের পরিকল্পনাটি চট করে কোথাও লিখে ফেলেন, তখন পরবর্তীতে ‘কিভাবে কি করবেন’ এই চিন্তা মাথায় আসে না। ফলে আপনার হতাশা আর দুশ্চিন্তা অনেকাংশে কমে যায়। এভাবে পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ আপনার আবেগকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর বাস্তবসম্মত ফলাফল প্রত্যাশা করতে সাহায্য করে।

কাজের পরিকল্পনা লিখে রাখার ৪র্থ সুবিধা

আপনি যখন একটি বড় কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকটির জন্য আপনার পরিকল্পনা ঠিক করে ফেলেন তখন আর কাজটিকে ততটা বড় মনে হয় না। ফলে আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন এবং আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম হন। অতএব, লিখিত পরিকল্পনা আপনার সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং বড় ধরণের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। একই সঙ্গে এটি আমাদের নিজের কাজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। ফলে আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলো সহজে চিহ্নিত করতে পারি এবং কাজের বাঁধাগুলো অতিক্রম করতে আগে থেকেই নিজেকে তৈরি করে ফেলতে পারি সহজেই। এছাড়াও লিখিত পরিকল্পনা আপনার কাজের জন্য একটি টাইমলাইন হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আপনি এই মুহূর্তে কোন পর্যায়ে আছেন বা লক্ষ্য পূরণে কতো সময় লাগবে সেটি সবসময় নির্ধারিত থাকে।

কাজের পরিকল্পনা লিখে রাখার ৫ম সুবিধা

লিখিত পরিকল্পনা আপনার কাজের ভুলগুলো শুধরাতে সাহায্য করে এবং ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। যদি কোন কারণে আপনার কাজটি পরিকল্পনামাফিক না হয়, তাহলে আপনি আপনার লেখা পড়েই বুঝতে পারবেন আপনার পরিকল্পনাটির কোন অংশে ভুল ছিল আর আপনাকে সফল হতে হলে নতুন কি করতে হবে। এর ফলে একই ভুল বারবার হবার সম্ভাবনা থাকে না। তাই আপনি লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকেন। একইভাবে আপনার কোন পরিকল্পনা সফল হলে আপনার কাছে এর একটি রেকর্ড জমা থাকে, যার ফলে আপনি বুঝতে পারেন কোন পথে এগোলে ঐ কাজটি পরেরবার আরও দ্রুত ও নির্ভুল হবে। তাই দিশেহারা হবার কোন কারণই নেই।

আমাদের অনেকেরই লেখালিখির অভ্যাস না থাকায় কথা গুছিয়ে লিখতে বা পরিকল্পনা করতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এতে করে এক ধরণের জড়তা সৃষ্টি হয় এবং আমরা আর কিছু লিখতেই চাই না। তবে লেখার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আপনি চাইলে কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো কেবল আপনার ইংরেজি লেখাকে নির্ভুলই করবে না, আপনার ভাষাকে আরও সুন্দর ও পরিমার্জিত করতে সাহায্য করবে। যেমন: গ্র্যামার গার্ল (Grammar Girl), গ্র্যামারলি (Grammarly), হ্যান্ডমেইড রাইটিংস (Handmadewritings), রিডেবল (Readable) ইত্যাদি।

গ্র্যামার গার্ল – এটি এক লেখালিখির ব্লগ যা আপনাকে নিয়মিত লেখার অভ্যাস গড়তে সাহায্য করবে।

গ্র্যামারলি –কম্পিউটারে টাইপিং এর সময় এই অ্যাপটি ইংরেজি গ্রামারের ভুল খুঁজে নতুন শব্দ, বাক্যের গঠন ও ভিন্নধর্মী লেখার সাজেশন দিবে।

হ্যান্ডমেইড রাইটিংস – এই ওয়েবসাইটটি আপনার লেখা কাটছাঁট করে সুন্দরভাবে গোছাতে সাহায্য করে।

রিডেবল – এটি আপনার লেখাটি যাচাই করে এর মান জানাবে। এভাবে নিজের পরিকল্পনাগুলো লিখে রাখার মাধ্যমে আপনি কেবল কাজে পারদর্শী হবেন তা কিন্তু নয়, এর ফলে আপনার চিন্তাও গোছানো হবে এবং নিজেকে আরও স্মার্টভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।