সময়ের সদ্ব্যবহার করার ৩টি কৌশল

আমাদের স্কুলজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পাঠ্য ছিল ‘সময়ের মূল্য’ রচনা। কিন্তু কষ্ট করে ক’জনই বা রচনা মুখস্থ করতে পারলেও বাস্তব জীবনে সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা অনেকেই ব্যর্থ হই। আর তাই আপনি যদি বড় কোন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হোন, তাহলে ‘সময়’ আপনার জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আপনার কোম্পানিতে কর্মী ৫ জন হোক বা ৫০০ জন, সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে না পারলে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যর্থতার দায় আপনার উপরেই বর্তাবে।

৮ ঘন্টার অফিসে অনেক সময় সব কাজ শেষ করা সম্ভব হয় না সত্যি, কিন্তু নিয়মিত এভাবে কাজ পেছাতে থাকলে লোকসানের মুখে পড়াটাও সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই ব্যবসায় উন্নতি করতে হলে, আপনাকে অবশ্যই দূরদর্শী হতে হবে। আর তাই সময়ানুবর্তীতা আপনার জন্য সবচেয়ে জরুরী।  টাইম ম্যানেজমেন্ট বা সময়কে সঠিকভাবে উপলব্ধি করাকে অনেকেই একজন দলনেতার প্রধান গুণ বা স্কিল হিসেবে দেখেন। কারণ সময়মতো কাজ শেষ করা কষ্টকর হলেও, অসম্ভব কিছু নয়। সময়ের সঙ্গে সময়ানুবর্তীতা আয়ত্ব করতে হলে আপনাকে কেবল সচেতন হলেই হবে না, অবশ্যই কৌশলীও হতে হবে। আজ তাই আমরা আলাপ করবো টাইম ম্যানেজমেন্টের তিনটি কার্যকর কৌশল নিয়ে।

প্রথম উপায় : হিসেব করে সময় খরচ করুন।

নিজের কাজের ‘কৌশল’ পরিবর্তন করার আগে কাজটি নিয়ে আপনি ‘কিভাবে চিন্তা করছেন’ সেটি নিয়েই ভাবা উচিৎ। প্রয়োজনে আপনি কয়েক সপ্তাহ ধরে নিজের কাজের কৌশলগুলো যাচাই করে দেখতে পারেন। আপনি ‘কিভাবে কাজ করলে সময় বাঁচে’ আর ‘কিভাবে করলে বাড়তি সময় লাগে’ সেটি চিহ্নিত করুন। এর জন্য আপনি বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। যেমন:

কাগজে কলম সঙ্গে রাখা: যেকোন কাজ ‘শুরুর সময়’ আর ‘শেষ করতে আপনার ঠিক কত সময় লাগে’ সেটি নিয়মিত কাগজে বা ডায়রিতে টুকে রাখতে পারেন। একইসঙ্গে সেই কাজের ফাঁকে কতক্ষণ বিরতি নিচ্ছেন সেটিও হিসেব রাখতে ভুলবেন না।

ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা: দিনের কোন কাজটিতে আপনি কতক্ষণ সময় ব্যবহার করছেন সেটি ক্যালেন্ডারের পাতায় লিখে রাখতে পারেন। তাহলে অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা সময়গুলো আপনার নজরে পড়বে। আপনি চাইলে মোবাইলের ক্যালেন্ডারেই এসব নোট করে রাখতে পারেন।

টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপ: ট্র্যাকিংটাইম (TrackingTime) এর মতো বেশ কিছু অ্যাপ আপনাকে সময়ের হিসেব রাখতে সাহায্য করতে পারে। এসব অ্যাপে আপনি প্রতিদিনের কাজের রেকর্ড জমা রাখতে পারেন। তাহলে, মাস শেষে অ্যাপের তথ্য যাচাই করলেই বুঝতে পারবেন সময়টা কোথায় অপচয় হচ্ছে।

এভাবে নিজের কাজের মূল্যায়ন নিজেই করতে পারলে আপনি সহজেই বাজে অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে পারবেন। যদিও অনেক সময় উল্টোটাও হতে পারে। হয়তো আপনি অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করছেন বা কাজের মধ্যে কোন বিরতি নিচ্ছেন না। ফলে আপনার কাজের মান ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কাজের গতিও কমে যাচ্ছে। তাই সব কাজই শেষ করতে লাগছে অতিরিক্ত সময়। সেক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে অল্প বিরতি নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করে দেখুন। দেখবেন কাজ করতে আপনি আগের চেয়ে স্বাছন্দ্য বোধ করছেন। আর কাজের গতিও বেড়েছে। এভাবে ছোট্ট বিরতি নিয়ে অল্প অল্প করে দ্রুত কাজ আগানোর পদ্ধতিকে বলে পামোডোরো টেকনিক।

দ্বিতীয় উপায়: কাজ করার কৌশল বদলে ফেলুন

যেকোন কাজ সঠিকভাবে শেষ করার সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভর করে কাজটির প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আর আপনার কাজ করার কৌশলের উপর। আপনি যদি কোন কাজকে কঠিন মনে করেন বা অসম্ভব ধরে নেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই সে কাজটি আপনি ঠিকভাবে শেষ করতে পারবেন না। তবে আপনি যদি আপনার কাজের বাধা আর নিজের দুর্বলতাকে শুধরে নিতে চেষ্টা করেন, তাহলে একই কাজ আপনি সফলভাবে শেষ করতে পারবেন। আর তাই একটু কৌশলী হলে, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আর লক্ষ্য ঠিক থাকলে কোন বাধাই আপনাকে আটকাতে পারে না। 

ঠিক তেমনি, কাজের সময়সীমাকে নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগ করে অগ্রসর হলেও ঠিক সময়ে কাজ শেষ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ধরুন একটি কাজ আপনাকে এক মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। এখন আপনি যদি এক মাস হাতে আছে ভেবে বসে থাকেন তাহলে আপনার কাছে সময়ের গুরুত্ব কমে যাবে, বরং আপনি যদি এক মাসকে ৩০ দিনে ভাগ করে প্রতিদিন কতটুকু কাজ শেষ করতে হবে তা হিসেব করে কাজ শুরু করেন তাহলে আপনার কাজটি নির্দিষ্ট গতিতে এগিয়ে যাবে। দিনশেষে আপনি নিজের অগ্রগতি নিজেই যাচাই করতে পারবেন।

তৃতীয় উপায় কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুণ

কাজের বাধাগুলো অতিক্রম করে কাজ সম্পাদনের কার্যকর পদ্ধতি নির্বাচন করার পর এবার কাজটির ওপর সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করতে হবে। কোন কাজ আপনার জন্য অত্যাবশ্যক আর কোনটি কম গুরুত্বপূর্ণ সেটি নির্বাচন করতে ভুল করলে চলবে না। প্রায় সময় গুরুত্বপূর্ণ না হলেও নিজের অভ্যাস অনুযায়ী বা ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে আমরা বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব নিয়ে ফেলি। যেটি আসলে আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য বা নিজের পদের তেমন অর্থবহ নয়। আর তাই কালক্ষেপণ না করে এই কাজগুলো সঠিক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে ফেলুন।

এভাবে নিজের ওপর থেকে বাড়তি বোঝা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং প্রয়োজনে সহকর্মীদের সঙ্গে যতটা সম্ভব কাজ ভাগাভাগি করে নিতে হবে। সময় অপচয় হয় এমন অপ্রয়োজনীয় অভ্যাসগুলোও ত্যাগ করতে হবে। আর সবশেষে নতুন কিছু শেখার জন্য নিজেকে সময় দিতে হবে। কাজের ফাঁকে আপনার হাতে যে সময় থাকে, সেটিকে শিক্ষামূলক কাজ যেমন বই পড়া, গবেষণা আর সহকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে ব্যয় করুন। সহকর্মীদের কাজ করার পদ্ধতি খেয়াল করে দেখুন। হয়তো তাদের কাছ থেকেও নতুন কোন কৌশল শিখে নিতে পারেন।…শেষ করার আগে, একটি কথা। কৌশলগুলো জানলেই কেবল হবে না। এসব নিয়মিত কাজে ব্যবহার করতে হবে এবং অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। তাই আরেকবার পুরো প্রক্রিয়াটি চিন্তা করে দেখুন। প্রথমে আপনার সময় কোথায়, কিভাবে ব্যয় হচ্ছেসেটির হিসেব রাখুন, নিজের কাজ করার পদ্ধতি বিশ্লেষণ করুন ও নতুনভাবে চেষ্টা করুন এবং অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় না দিয়ে নিজেরকাজ ভাগ করে নিন। এবার কাজের প্রতি মনোযোগ স্থির রাখুন, বারবার চেষ্টা করুন এবং বাস্তবসম্মত ফলাফল প্রত্যাশা করতে শিখুন। এভাবেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে আপনার কাজের মানও বাড়তে থাকবে। আর ম্যানেজার হিসেবে আপনি প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখতে সফল হবেন।