সময়ের সঠিক ব্যবহার করার চারটি কার্যকর উপায়

সময় এক অদ্ভুত ধারণা এবং একইসঙ্গে অনেক বড় চিন্তার বিষয় বটে। বিশেষ করে আপনি জীবনে বড় কিছু হতে চাইবেন কিংবা সবসময় নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করবেন সেক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সময়ের সঠিক ব্যবহার তাই অত্যন্ত জরুরি। 

পৃথিবী নামক এই গ্রহে আমাদের সময় সীমিত। আর তাই এক জীবনে আমরা যা কিছু অর্জন করতে চাই কিংবা নিজের যে স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই সেটি বাস্তবে রূপ দিতে সঠিক সময়েই সঠিক কাজটি করা প্রয়োজন। আর সেজন্যই ফকির লালন সাঁই বলে গেছেন, সময় গেলে সাধন হবে না!!

কিভাবে সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে সেটি জানা থাকলে কিন্তু আমরা সহজেই আমাদের সময় এবং পরিশ্রম সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। এতে করে যে কাজটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থবহ সেটায় আমরা বেশি মনোযোগ দিতে সক্ষম হবো। ফলে সময়ের অপচয়ও কম হবে।

সময়ের সঠিক ব্যবহার শুরু করতে আপনাকে কিছু মৌলিক বিষয়ে সচেতন হতে হবে। জানিয়ে দিচ্ছি, যে চারটি উপায়ে আপনি সময়ের মূল্যায়ন করে নিজেকে এবং আপনার চলার পথকে আরও সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে পারবেন।

সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে সব গুছিয়ে কাজ করুন।

আপনার মূল্যবান সময় সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হলে এটিই আপনার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ। শুরুতেই নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি সব কাজ গুছিয়ে করছেন এবং কোন কাজে কত সময় ব্যয় করছেন সেটিরও হিসেব রাখছেন। এরপর আপনি কীভাবে আপনার সময় ব্যয় করতে চান, কোন কাজে কতটুকু সময় দিতে চান এবং কোন কাজে কেমন শক্তি খরচ করতে হচ্ছে সেটি নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে ডায়েরি ব্যবহার করুন। সবকিছুর হিসেব লিখে রাখুন প্রতিদিন। ভবিষ্যতে এসব কাজে আপনি কত সময় দিতে পারবেন এবং কোন কাজে কি পরিমাণ মনোযোগ দিতে চান সেটিও পরিকল্পনা করে ফেলুন। এবার আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ডায়রিতে লিখুন এবং দৈনন্দিন কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন। তাহলেই দেখতে পাবেন কাজের বাইরে আপনার হাতে কত বাড়তি সময় থাকে। ঐ সময়টুকু আপনি চাইলেই আপনার পছন্দের কাজে ব্যয় করতে পারেন।

প্রয়োজনে অন্যদের জবাবদিহি করুন যেন তারা আপনার সময়ের মূল্য দিতে চেষ্টা করে।

আপনি যদি এমন লোক হন যে সব কথাতেই হ্যাঁ বলে বা মানুষকে কখনো না বলতে পারে না তাহলে এখনই সাবধান হোন। আপনার যদি মোবাইলে ম্যাসেজ, ইমেইল কিংবা ফোনকল আসার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়ার অভ্যাস থাকে তাহলেও সতর্ক থাকুন। এর মানে এই যে আপনি সবসময় ফ্রি থাকেন। অর্থাৎ আপনার কোন জরুরি কাজ বা ব্যস্ততা নেই। আর এভাবেই অন্যরা আপনার সময় অপচয়ের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।

তাই এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে অপ্রয়োজনীয় ফোন রিসিভ করা থেকে বিরত থাকুন, সব ম্যাসেজ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়া এবং বার বার ইমেইল চেক করা বন্ধ করুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইমেইল চেক করার অভ্যাস করুন এবং অপ্রয়োজনীয় ফোন বা ম্যাসেজের উত্তর হাতের কাজটি শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে সময় বাঁচবে আর পরিশ্রমও কমবে। ফলে বিশেষ মানুষদের বাড়তি সময়ও দিতে পারবেন।

অ্যাকাডেমিকস ব্রিকসের বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্মিথের মতে, “কেউ যদি আপনার মিটিং বা দাওয়াতে খুব বেশি দেরি করে আসে তাহলে তাঁকে আপনার জানানো উচিৎ যে আপনি এই দেরি করা অভ্যাসটা পছন্দ করেন না। তাছাড়া সামাজিকভাবে বা পেশাদার দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এই ব্যাপারটি যদি আপনি অন্যদের বুঝিয়ে বলতে পারেন তাহলে দেখবেন তারা আপনাকে অযথা বিরক্ত করবেন না। বরং আপনার সময়ের মূল্যায়নকে সম্মান করবেন।”

সময়ের মূল্যায়ন করতে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হোন।

আপনার জীবনে কি অর্জন করতে পারবেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সফল হবেন সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার শারীরিক সুস্থতার ওপর। আর তাই আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আপনি কত সময় ব্যয় করেন সেটাও হিসেব রাখা দরকার।

নিজেই নিজের কাজের মূল্যায়ন করুন এবং কাজের ফলাফল বিশ্লেষণ করুন।

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যেমন সবকিছু পরিকল্পনা করা প্রয়োজন, তেমনি অতীতকে মূল্যায়ন করেও সময়ের যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। তবে এর অর্থ এই নয় যে অতীতের ভুল নিয়ে আফসোস করে সময় নষ্ট করতে হবে। বরং আপনি আগে কি ভুল করেছেন বা কোন কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেননি কিংবা কতটুকু ভালো করতে পারতেন সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। এই কৌশলটি আপনি নিজের সময় সঠিক ব্যবহার করছেন কি না এবং যে পথে এগোতে চাচ্ছিলেন সেই পথেই আছেন কি না সেটি নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। তাই নিজেকে যাচাই করাটা সময়ের সঠিক মূল্যায়নের জন্যে অত্যন্ত জরুরি।