দৈনন্দিন কাজের তালিকা কাগজে নাকি ফোনে রাখবেন?

সময় মানুষের পুরনো শত্রু। বিশেষ করে আপনি যখন কোন কাজ সময়মতো শুরু করার চেষ্টা করবেন কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চাইবেন তখন সময় আপনার জন্যে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। ফলে আমরা মনে মনে সময়ের সঠিক ব্যবহার করার চিন্তা করলেও পরিকল্পনা মাফিক কাজ করাটা খুব কঠিন হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে আমাদের বয়স বাড়ে, কাজের পরিধি বাড়ে আর একই সঙ্গে বাড়ে দৈনন্দিন কাজের চাপ। আর তাই আমাদের কাজের একটি তালিকা থাকা জরুরি হয়ে পড়ে।

স্কুল জীবনে আমরা মাই ডেইলি রুটিন কিংবা দৈনন্দিন কাজের তালিকা নিয়ে অনেক বড় বড় রচনা, ভাব-সম্প্রসারণ কিংবা ইংরেজিতে প্যারাগ্রাফও লিখেছি। তেমনি অনেক সময় আমাদের স্কুলের বাড়ির কাজ আর পড়াগুলো ডায়রিতে লিখে রাখতে হয়েছে। আর সে কারণেই সময়মতো কাজগুলো করা সহজ হতো। আর সপ্তাহ শেষে কি কি বাড়ির কাজ বাকি রয়েছে সেটিও জানা যেত। ডায়রিতে লেখা সেসব কাজের তালিকা আমাদের যেমন দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দিত, তেমনি সপ্তাহ শেষে কাজের সন্তুষ্টিও নিশ্চিত করতো।

অগোছালো জীবন যেমন অস্বাস্থ্যকর তেমনি গুছিয়ে কাজ করতে পারলেও জীবনটা অনেক সুন্দর হতে পারে। আর তাই আমরা বড় হয়ে গেলেও আমাদের জীবনে দৈনন্দিন কাজের সেই তালিকার ভূমিকা কিন্তু আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে অনেক অ্যাপ আর সফটওয়্যার আমাদের এসব টাস্ক লিস্ট কিংবা টু ডু লস্টের মতো করে কাজের তালিকা করতে সাহায্য করে। অনেকে আবার খাতা কলমেও কাজগুলো টুকে রাখেন। এটা যেমন মনকে স্থির রাখতে সাহায্য করে তেমনি একটু হাতের লেখার প্র‍্যাকটিসও হয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই টু ডু লিস্ট বা কাজের তালিকা কি খাতায় লেখা উচিৎ নাকি ফোন কিংবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে?

এটি নির্ভর করে ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর আর অভ্যাসের ওপর। উভয় প্ল্যাটফর্মেই বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী একেক জনের ক্ষেত্রে একেকটা কার্যকর হয়ে থাকে। আর তাই এখানে আমরা দুটো মাধ্যম নিয়েই আলাপ করবো, যাতে আপনি বেছে নিতে পারেন কোনটা আপনার জন্য প্রযোজ্য।

ডিজিটাল মাধ্যমে কাজের তালিকা করা

সহজে বহনযোগ্য

মোবাইল বা যেকোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজের তালিকা সংরক্ষণের প্রধান সুবিধা হচ্ছে এটি যেকোন স্থানে যেকোন সময় ব্যবহার করা যায়। বর্তমানের ব্যস্ত বিশ্বে আমাদের সমস্ত ডিভাইস, অ্যাপ আর অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলি সঠিকভাবে সিঙ্ক করে রাখা জরুরি। তাহলে যেকোন তথ্য অনলাইন কিংবা অফলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে একসেস বা ব্যবহার করা যায়।

যেসব অ্যাপ বা অনলাইন মাধ্যমে ক্রস-প্ল্যাটফর্ম সিঙ্কের সুবিধা থাকে সেটি মোবাইল বা কম্পিউটারের নোট করা কাজগুলো একত্রে নিয়ে আসে। ফলে আপনি ট্যাবলেট, কম্পিউটার কিংবা আপনার সেলফোন থেকে করণীয় কাজের তালিকা অনুসরণ করতে পারেন সহজেই। তবে এক্ষেত্রে অসুবিধা হলো যখন আপনার কোন ডিজিটাল ডিভাইসে অ্যাক্সেস নেই তখন কিন্তু কাজের তালিকাটিও হাতের লাগালে পাচ্ছেন না।

গুছিয়ে কাজ করা সহজ

আমাদের প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতি বছর কাজ আর দায়িত্ব বাড়ছে। বর্তমানে জীবন আগের মতো সহজ বা অনুমেয় নয়, আর তাই আপনি কখনোই জানেন না সামনে কি ঘটতে যাচ্ছে বা কখন কি নতুন কাজ শুরু করতে হবে। 

এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আপনাকে কাজের তালিকাটি যেকোন সময় পরিবর্তন এবং আপডেট করার স্বাধীনতা দেয়। এখানে আপনি যেমন জরুরি কাজগুলো আলাদাভাবে ট্যাগ করতে পারবেন তেমনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজগুলোকে যেকোন সময় তালিকায় আগে-পরে সাজিয়ে নিতে পারবেন। 

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তালিকা করা সহজ ও কার্যকর হয়

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাজের তালিকা বা টু ডু লিস্ট করার অ্যাপগুলো সাধারণত সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। এ কারণেই তারা সবসময় আপডেটেড থাকে। ফলে এই অ্যাপগুলো নিত্যনতুন সুবিধা যোগ করা হয় এবং এগুলো নেভিগেট করা বা চালানো সহজ হয়। হয়তো আগামীতে অ্যাপগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আমাদের কাজের গুরুত্ব নির্ধারণ করতে পারবে আর তালিকাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব কাজ সাজিয়ে রাখবে।

কাগজে কাজের তালিকা

হাতে কলমে কাজ করাটা স্বস্তিদায়ক

কাগজে কাজের তালিকা করা কিংবা তালিকায় কাটছাঁট করা এক ধরণের মানসিক  স্বস্তি দেয়, কারণ এখানে সবটাই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে। চাইলে আপনি ছবি এঁকে কিংবা কোন নকশা করেও তালিকার কাজগুলো দাগিয়ে রাখতে পারেন। বিভিন্ন রঙের কালি দিয়ে জরুরি কাজটা চিহ্নিত করে রাখতে পারেন। কাগজটা আপনার ছবি আঁকার ক্যানভাসও হতে পারে। পাশাপাশি যেসব কাজ সম্পন্ন হয়েছি সেটিকে দাগ টেনে কেটে ফেলাতাও এক ধরণের আনন্দ দেয়। ফলে আপনি নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও সন্তুষ্ট থাকতে পারেন।

মনোযোগ নষ্ট হওয়ার সুযোগ কম

কাগজে কলমে লেখার সময় কাজে মনোযোগ ধরে রাখাটা সহজ হয়। তালিকা লেখার সময় কাজের আপনি কিন্তু কাজের পরিকল্পনাটাও সেরে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে ফোনের নোটিফিকেশন কিংবা কোন পপ-আপ ম্যাসেজ আপনার কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে না।

স্ক্রিন টাইম ও ডিজিটাল ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীলতা কমে

সারাদিন ফোন আর কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকাটা আমাদের ওপর এক ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে অন্য কাজে মনোযোগ দেয়া কঠিন হয়ে যায়। তবে কাগজে লেখালেখি করার ফলে এসব ডিভাইস থেকে কিছুক্ষণের জন্য ছুটি পাওয়া যায়। তাতে আমাদের চোখেরও বিশ্রাম হয়।

এখনো বুঝতে পারছেন না কোন মাধ্যমটি আপনার জন্য সুবধাজনক?

অন্যদের ক্ষেত্রে ফোনে কাজের তালিকা করাটা সহজ বলেই যে আপনার জন্য সেটা প্রযোজ্য হবে তেমনটা কিন্তু না। এক্ষেত্রে নিজেকে প্রশ্ন করুন:

আপনি কি সবসময় কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে পছন্দ করেন নাকি ডিজটাল ডিভাইস ব্যবহারে অভ্যস্ত?

কাজের তালিকার জন্যে আপনি যদি প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকেন তাহলে সেটিও যাচাই করুন। একইভাবে কাগজে লেখাটা যদি আপনার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক হয় সেটিও বিবেচনা করতে হবে। তবে যেভাবেই তালিকা করুন না কেন, কাজের তালিকা আপনার জীবনকে গুছিয়ে রাখতে আর সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। একটি সুপরিকল্পিত তালিকা কাজের চাপ কমাতে সহায্য করবে। অনেকেই চাকরি এবং ব্যক্তিগত কাজের জন্য আলাদা তালিকা ব্যবহার করেন। এসব তালিকা আপনার জীবনকে সুসংহত করবে এবং কাজের দক্ষতাও বাড়াবে।