কাজের মান কমে যাওয়ার পেছনে দায়ী ৫টি অভ্যাস

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি কাজ করতে পারছেন না? কিংবা নিরলস পরিশ্রম করার পরেও আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না? তাহলে আপনি একা নন। আমরা অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছি।

আমাদের মানসিক অবস্থা এমনকি অপর্যাপ্ত ঘুমও অনেক সময় কাজের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে। তবে এসব কিছুই হয়তো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই অনেক সময় মনোযোগ দিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করলেও আমরা নিজের সেরাটা দিতে পারি না। আবার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজে নামার পর দেখা যায় দিন শেষে অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগলেও শেষে গিয়ে পুরো ব্যাপারটাই হয়তো হাত ফসকে যায়। তাহলে ঠিক কি করলে আমরা নিজের সেরাটা দিতে পারবো? কিভাবে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল পাওয়া সম্ভব? অংকটা জটিল মনে হলেও এর উত্তর খুব সহজ। কাজের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দৈনন্দিন জীবনের বেশ কিছু অভ্যাস আমাদের কাজের আশানুরূপ ফল থেকে পিছিয়ে আমাদের রাখে। এই বিষয়গুলোকে তারা নাম দিয়েছেন ‘টাইম সাকার্স’ অর্থাৎ সময় অপচয়কারী বদভ্যাস নামে। এর মানে এই নয় যে আমাদের এই অভ্যাসগুলো বাদ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খুঁটিনাটি দিকগুলো খেয়াল রেখে আমাদের এই অভ্যাসগুলো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা উচিৎ। তবেই আমরা লক্ষ্য পূরণে অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে পারবো। তাহলে এই বদভ্যাসগুলো কি কি?

# কাজের মান আশানুরূপ না হওয়ার ১ম কারণ: ঘনঘন ইমেইল চেক করা

কাজের আপডেট আর নির্দেশনার জন্য আমাদের অনেকেরই ইমেইল চেক করার প্রয়োজন পড়ে। তবে ঘনঘন ইমেইল চেক করলে সেটা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় অপচয় করার পাশাপাশি মনোযোগও নষ্ট করে। একটি জরীপে দেখা যায় একজন কর্মী প্রতি ঘণ্টায় ৩৬ বার পর্যন্ত তার ইমেইল চেক করে থাকেন। আপনার যদি মনে হয় কাজের সময় আপনাকেও এতো বেশি বেশি ইমেইল চেক করতে হয়, তাহলে কিন্তু এই ব্যাপারটাই আপনার কাজের মান কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে আপনার কাজের গতি যেমন কমে যায়, মনোযোগও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জরুরী ইমেইলের জন্য আমাদের অনেকেরই প্রায় সময় অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু তার জন্য বার বার ইমেইলের ইনবক্স চেক করলে তো আর বার্তাটি তাড়াতাড়ি হাতে পৌঁছবে না। তার চাইতে বরং সময় বেধে ঘন্টায় কয়েক বার চেক করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বারবার ফোনের ইমেইল অ্যাপ ওপেন না করে বা প্রতি ঘণ্টায় ইমেইলের ওয়েবসাইটে গিয়ে নতুন বার্তা আসার অপেক্ষা না করে বরং দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়েই ইমেইল চেক করুন। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট সময় নিয়ে ইমেইল চেক করুন। অথবা ঘড়ি দেখে একটা নির্দিষ্ট সময় পর ইমেইল ওয়েবসাইটে যান কিংবা নোটিফিকেশনের আসার পরই ইনবক্সে গিয়ে ইমেইল চেক করুন। কেননা কাজের মধ্যে বারবার ইমেইল চেক করতে হলে কাজের প্রতি আপনার আকর্ষণটাই হারিয়ে যেতে পারে!

# কাজের মান আশানুরূপ না হওয়ার ২য় কারণ: ইন্টারনেটে অযথা সময় ব্যয় করা

কর্মক্ষেত্রে সাইবারলোফিং (cyberloafing) শব্দটি দিনদিন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আর অনেক প্রতিষ্ঠান এটিকে ভালো চোখে দেখছে না। সাইবারলোফিং অর্থ অফিসে বসে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আনলিমিটেড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আমাদের এই নতুন বদভ্যাসটি তৈরি করেছে। তাই যেসব ইন্টারনেটের নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ আছে সেখানে অনেকেই কাজের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করেন। হয়তো আপনি কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে সার্চ করতে ইন্টারনেটে গেলেন তখন আপনার একটা গান মনে পড়লো। আপনি ইউটিউবে গিয়ে গানটি শুনলেন। তারপর ইউটিউব আপনাকে নতুন আরেকোটি আকর্ষণীয় ভিডিও সাজেস্ট করলো। আর আপনিও সেখানে ক্লিক করে বসলেন। ব্যাস শুরু হয়ে গেল সাইবারলোফিং। কিন্তু এদিকে কাজের সময়টা যে নষ্ট হচ্ছে সে খবর কি আছে জনাব? এইতো দেখুন এই লেখাটি লেখার সময় আমিও কিন্তু একবার ইউটিউবে ঘুরে এসেছি… !!!

# কাজের মান আশানুরূপ না হওয়ার ৩য় কারণ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি

যদিও সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারনেট ব্যবহারের মধ্যেই পড়ে তারপরেও এর প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। কারণ আপনি যদি প্রতিদিন অফিসে বসে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো যেমন: ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম,  টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের কেবল নোটিফিকেশন চেক করেন, তাতেই আপনার কর্মক্ষেত্রে ২ ঘণ্টা সময় পার হয়ে যাবে। আর তাই মোবাইলের ‘নোটিফিকেশন’কেই কাজের সময় মনোযোগ নষ্ট করার মূল হোতা মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও আপনি যখন কাজের ফাঁকে সামাজিক মাধ্যমে কোনকিছু পোষ্ট করেন, তখন কাজের চাইতে আপনার মাথায় পোস্টে কয়টি লাইক কমেন্ট পড়লো সেই চিন্তাই ঘোরাফেরা করে। আর নোটিফিকেশন বেল বেজে উঠার সাথে সাথে আপনার হাত পকেটে চলে যায়। তারপর মোবাইল হাতে নিয়ে আরও কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করেন সেটি চেক করতে। এর ফলে সময়মতো আপনার কাজ শেষ করা আর সম্ভব হয় না। ভেবে দেখেছেন কি, কেবল নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়েই আমরা ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করে ঘণ্টা খানেক সময় কাটিয়ে দিয়েছি কতবার?

# কাজের মান আশানুরূপ না হওয়ার ৪র্থ কারণ: মাল্টিটাস্কিং বা একসঙ্গে অনেক কাজ করার প্রবণতা

আমরা অনেকেই হয়তো এই ব্যাপারটিতে সচেতন নই যে, মাল্টিটাস্কিং করতে গেলে আমাদের আসলে যেকোন কাজ শেষ করতে স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি সময় লাগে। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের তথ্য ধারণক্ষমতা সীমিত এবং মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতাও একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে। যার ফলে আমরা চাইলেও একাধিক কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারি না। এতে করে কোন কাজই ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। অর্থাৎ একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গিয়ে আমরা প্রতিটি কাজের মানই কমিয়ে ফেলি। তাই একসঙ্গে সব কাজ করার চেষ্টা না করে বরং সহকর্মীদের সঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করে নিন অথবা একটা কাজ দ্রুত শেষ করে অন্যটিতে হাত দিন। এতে সময়ও বাঁচবে কাজগুলোও সঠিকভাবে হবে।

# কাজের মান আশানুরূপ না হওয়ার ৪র্থ কারণ: কাজের পরিবেশ না থাকা

কর্মক্ষেত্রে কাজ করার মতো পরিবেশ না থাকলে আসলে কাজে মন দেয়া খুব কঠিন। বিশেষ করে যখন অফিসে কাজের চাইতে কথা বেশি হয়। আপনার সহকর্মীরা যদি খুব বেশি কথা বলেন তাহলে আপনার মনোযোগ কাজের চাইতে বরঞ্চ সেদিকেই আটকে থাকার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের চাইতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কাজের জন্য বেশি সহায়ক। তাই আপনার সহকর্মী মুখ বন্ধ করে না থাকতে পারলে তাকে সরাসরি বুঝিয়ে বলুন যে আপনার জন্য কাজ শেষ করাটা খুব জরুরী। অন্যথায় তার শব্দদূষণ থেকে রেহাই পেতে কানে হেডফোন গুঁজে একটি শ্রুতিমধুর গান বেছে নিন।

তাই কাজের আশানুরূপ ফল পেতে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে নিজের অভ্যাসের কারণে কিংবা কাজের পরিবেশের জন্য যেন সময় বা কর্মশক্তি কোনটাই অপচয় না হয়!