ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রায় সময় তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকায়নকে অন্য ব্যাপারগুলোর চাইতে কম গুরুত্ব দেয়া হয়। অনেকেই ভাবেন, কাজের পদ্ধতি কিংবা উৎপাদন প্রক্রিয়া কোন কিছুতে বাধাগ্রস্ত না হলে এই আধুনিকায়নটার প্রয়োজনই বা কিসে?
তবে তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো এবং সফটওয়্যার আপডেট বা পণ্যের আধুনিকায়ন না হলে সেটা নতুন বাজার ধরার ক্ষেত্রে, বিপণন, পণ্যের প্রচার বা প্রসারের ক্ষেত্রে আপনার জন্য বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি অনেকভাবেই আপনার ব্যবসার জন্য ক্ষতিকার হতে পারে। আর তাই ব্যবসার জন্য প্রযুক্তির আধুনিকায়ন কেন প্রয়োজনীয় সেটা বোঝার জন্যে খুব কাছ থেকে পুরো বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করা দরকার।
যে কারণে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন
আপনার ব্যাবসায়িক প্রতিযোগীরা হয়তো এরইমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের সব কাজ সেরে ফেলেছে এবং এর সুবিধাও পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি আপনাকে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করে। এছাড়াও কর্মীদের কাজের দক্ষতা বাড়ানো এবং তাদের কাজের সন্তুষ্টির মতো অনেক অনেক সুবিধা এর সঙ্গে জড়িত। মনে রাখবেন – কর্মচারীরা খুশি থাকা মানে কর্মচারীদের কাজের দক্ষতা ঠিক থাকা। আর ব্যবসার আধুনিকায়নই এটি অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
আধুনিকায়ন গতি বাড়ায়
যেসব প্রযুক্তি আপনার ব্যবসার কাজগুলোতে সাহায্য করে সেগুলো কাজের গতিও বাড়াতে পারে। এর ফলে গ্রাহক, ভোক্তা এবং এমনকি সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও দ্রুত ও নিখুঁত হয়। উদাহরণস্বরূপ মোবাইল আর ক্লাউড কম্পিউটিং আপনার কর্মীদের যেকোন প্রয়োজনে অফিসের বাইরে থেকেও অফিসের কাজ করতে সাহায্য করতে পারে। চাইলে তারা অফিস থেকে একদিন ছুটি নিয়ে বাসাতেই কাজ করতে পারে। এতে করে তারা একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে চলে আসে। প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তারা ইমেল, ফোন কলের দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং একই সময় অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজের চাপ শনাক্ত করতে ও সামলাতে সাহায্য করে
যখন একসঙ্গে অনেক কাজ জমে যায় বা অতিরিক্ত চাপ থাকে তখন দুই তিনটি কাজ একসঙ্গে করতে গিয়ে একদিকে যেমন মূল্যবান সময় হারাতে হয় অন্যদিকে সবাই চাপ সালমাতে গিয়ে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি আপনাকে কাজের হিসেব রাখতে সাহায্য করে, কাজের গতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কোন সময় বা কোন ক্ষেত্রে বেশি চাপ পড়ে সেটি আগে থেকেই শনাক্ত করে আপনাকে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। এর ফলে কাজের দক্ষতা বাড়ে আর মানসিক চাপ কমে।
আধুনিক প্রযুক্তি মানেই সমন্বয় আর সমাধান
একই ইমেইলের ডকুমেন্ট নিয়ে যখন একাধিক লোক কাজ করে তখন কে আগে কাজ শুরু করবে বা কে পরে করবে সেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অথচ আমরা যদি কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করে একই ইমেইলের কয়েকটি কপি করে ফেলতে পারি তাহলে একই সময়ে সবাই একটি ডকুমেন্ট নিয়েই কাজ করতে পারি। এতে করে সময় যেমন বাঁচে সবার মধ্যে কাজের সমন্বয়ও নিশ্চিত হয়। এসব প্রযুক্তি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে লাগে।
যেমন ধরুন, অফিস ৩৬৫, গুগল ডক এবং ওয়ানড্রাইভের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটা ডকুমেন্ট কয়েকজন মিলে এডিট করা যায়। এমনকি চাইলে চ্যাট বক্সে ম্যাসেজের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আলাপ করা যায়। ফলে কাজটি একসঙ্গে পর্যবেক্ষণ আর সমন্বয় করা যায়।
আপনি চাইলে স্ল্যাকের মতো ভার্চুয়াল মিটিং রুম সুবিধাসহ প্ল্যাটফর্মেও এসব কাজ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ যারা ম্যানেজমেন্ট আর লিডারশিপের মতো টপিক নিয়ে আলোচনা করতে চায় তারা সবাই মিলে স্ল্যাকের একটা রুম খুলে ফেললে এই ইস্যুতে নিজেরা আলাপ আলোচনা করতে পারে।
ব্যবসার আধুনিকায়ন আপনার প্রতিষ্ঠানের ইমেজ বা মান বাড়ি দেয়
তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিকায়ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর উন্নতি করে আর সবাইকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে পারে। এটা কেবল গ্রাহক সেবার মানই বাড়ায় না, এর মাধ্যমে কর্মীদের কাজের পরিবেশ উন্নত হয়, তাদের দক্ষতা বাড়তে থাকে আর কাজের সময়ও বাঁচে।
যেখানে সেখানে অপচয় না করে উপযুক্ত খাতে ব্যয় করা উচিৎ
অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করাটাকে অপচয় মনে করে। অথচ এই খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ বাকি সব খাতের লোকসান কমাতে পারে। যেমন ধরুন একটা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সার্ভার থাকলে ফাইল শেয়ার করার জন্য আর কোন আলাদা প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে না। সার্ভার বানানোর জন্য এককালীন খরচটা ব্যয়বহুল তবে সেটাই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
একইভাবে যদি পুরো সার্ভারটা ক্লাউড বা অনলাইন সিস্টেমে তৈরি করা যায় তাহলে কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যেকোন জায়গা থেকেই অফিসের কাজটা করতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রেও আপনাকে সেসব সার্ভিস বা সেবা নেয়ার জন্যে অন্য প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ দিতে হবে। তবে এই বিনিয়োগ অবশ্যই লাভজনক। আর প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের যখন উৎপাদনের হার বাড়াবে তখন সেই লভ্যাংশ দিয়ে কর্মীদের আরও ভাল সরঞ্জাম, সফ্টওয়্যার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বেতন-ভাতাও বাড়ানো যেতে পারে।
তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি
আইটি অবকাঠামো পুরানো হয়ে গেলে, তথ্য চুরি, হ্যাকিং এবং অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি দেখা দেয়। যেহেতু হ্যাকাররা দিন দিন বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে, সেহেতু তথ্যের সুরক্ষার জন্যেও আপনার প্রতিষ্ঠানের সব প্রযুক্তি পণ্যও নিয়মিত আপডেট করতে হবে। অন্যথায় আপনার প্রতিষ্ঠানই না, কর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে বা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও নষ্ট হতে পারে।
শেষকথা
উৎপাদন বাড়াতে এবং কর্মীদের কাজ সহজ করাতে প্রযুক্তির আধুনিকায়নের বিকল্প নেই। তবে সব প্রযুক্তিই যে আপনার কাজে লাগবে তেমনটাও ঠিক না। আপনার প্রতিষ্ঠান বা কর্মীদের কি ধরণের অবকাঠামো দরকার বা তারা কোন ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত সেটিও যাচাই করা প্রয়োজন।
তবে নতুন প্রযুক্তি কমবেশি সব কাজকেই সহজ ও লাভজনক করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিষ্ঠানের কেউ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত না হলে, তাকে শিখতে সময় দিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকায়ন যাতে মানসিক চাপ না বাড়ায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি প্রতিষ্ঠান ও কাজের মান বাড়াতে গ্রাহকবান্ধব, কর্মী বান্ধব ও সময়োপযোগী আধুনিক প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।