“সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হলেই আমি খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। ছুটির দিনে অনেক প্ল্যান থাকলেও, কিছুই করা হয়ে ওঠে না। আর পরদিন সকালবেলা ঘড়ির এলার্মে ঘুম ভাঙতেই আবার অফিসে যেতে হয়। যেতে যেতে ভাবি, আজকের দিনটা হয়তো ভালো যাবে, সব কাজ ঠিকভাবে হবে। কিন্তু অফিসে পা দেয়ার পর আর কিছুই যেন ঠিকভাবে হয় না। সবকিছু অসহ্য মনে হয়। আর চাকরি করতেই ইচ্ছা করে না…”
কি? আপনার সঙ্গে কখনো এমনটা হয়েছে নাকি? … আসলে আমাদের অনেকের সঙ্গেই এমন হয়। অনেকসময় দেখা যায়, অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে দারুণ কোন প্ল্যান করলেন কিন্তু পরে আর কাজটা আগাতে পারছেন না। বা আপনি হয়তো চাইছেন নিজের একটা আলাদা কোম্পানি দাঁড় করাতে কিন্তু সাহস পাচ্ছেন না বা কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় আমরা আসলে কি করতে পারি?
বিখ্যাত লেখক ও প্রশিক্ষক ইয়ুগেন আলেপ্পো তার একটি বইতে দ্রুত সময়ে তার নিজের একটি প্রকল্প দাঁড় করানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। অনেকেই তাঁর দেখানো এই পথ অনুসরণ করে নিজের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করতে সফল হয়েছেন। ইয়ুগেন বলেন, আপনাকে এমন কিছুতে সময় দিতে হবে যেটি আপনি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন এবং যা আপনাকে আরও বিকশিত হতে সাহায্য করবে। যেমন, লেখক নিজে বই লিখতে আর পাবলিক স্পিকিং অর্থাৎ বিভিন্ন ইস্যুতে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে, নিজের মতামত জানাতে ভালোবাসতেন। আর তাই বই লেখার মাধ্যমে আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে নিজেই একজন উদ্যোক্তা হয়ে যান। তাই আপনাকেও আপনার পছন্দের বিষয়টি খুঁজে বের করতে হবে। আপনাকে এমন কোন আইডিয়া বা পণ্য নিয়ে কাজ করতে যেটা মানুষের ভাগ্য বা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করে অথবা তাদের জীবনকে সহজ করে দেয়। নিজের অভিজ্ঞতা, শ্রম আর জ্ঞানকে এমনভাবে কাজে লাগাতে হবে যাতে কাজ নিয়ে নিজেও সন্তুষ্ট থাকা যায় আর অন্যদের জন্যেও সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাহলে শুরু করা যাক?
১ম দিন:
আপনি যদি সাত দিনেই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা শুরু করতে চান, তাহলে শুরুতেই আপনাকে আপনার পণ্য বা পরিকল্পনাটির ক্রেতা বা ভোক্তা কে বা কারা সেটি জানতে হবে। আপনার বন্ধুবান্ধব বা কাছের লোকজনের মধ্য থেকে এমন কিছু মানুষকে নির্বাচন করুন যারা আপনার এই আইডিয়াটি পছন্দ করবে বা আপনার পণ্যটি ব্যবহার করতে চাইবে। ১০ জন মানুষকে নির্বাচন করে তাদের চাহিদা জানার চেষ্টা করুন। প্রশ্ন করুণ। যেমন: আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজে মনযোগী করার বা অনুপ্রাণিত করে তোলার কোন কৌশল বের করতে পারেন তাহলে কয়েকজন প্রোজেক্ট ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা কি কি সমস্যা ফেইস করছেন তা জানতে চান। তাদের সমস্যাটি চিহ্নিত করে এমন একটি প্রশ্ন তৈরি করুন যার উত্তর বা সমাধান আপনার কাছে আছে। আপনি যদি কোন পণ্য বা সফটওয়্যার বাজারজাত করতে চান তাহলে এর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপ করুণ। এবং একটি প্রশ্ন লিখুন যার সমাধান আপনার পণ্যটি দিতে পারবে।
২য় দিন:
আগের দিনের প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তর বা সমাধানগুলো চিহ্নিত করুন। অথবা কিভাবে আপনার পণ্যটি সেবা দিতে পারে সেটি চিন্তা করুণ।
৩য় দিন:
এবার সবার সঙ্গে আলোচনা করে পাওয়া প্রশ্ন বা সমস্যাগুলো একত্রিত করে এর সমাধানটি লিখে ফেলুন। অথবা দশজন মানুষের সঙ্গে আলাপ করে দেখুন, তারা কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে চায়। এতে অবশ্য বেশি সময় লাগতে পারে, তার চাইতে বরং নিজের আইডিয়াটাই লিখে নিন।
৪র্থ দিন:
আপনার লেখা শেষ হয়ে থাকলে, পুরো লেখাটি কাটছাঁট করে, সংশোধন করে লিখে একটি পিডিএফ ফাইল তৈরি করুন অথবা আপনি যদি কোন পণ্য বা সফটওয়্যার তৈরি করতে চান সেটির ডিজাইন বা পরিকল্পনা করে ফেলুন (পিডিএফ ফাইলে)। এবার একটি ব্লগে প্রশ্নগুলো উল্লেখ করে সমাধান জানানোর অর্থাৎ পিডিএফ ফাইলটি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিন। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার প্রশ্নটি যেন সহজবোধ্য হয়। এবং আপনার পণ্য বা সমধানটি যেন সরাসরি সমস্যা চিহ্নিত করে উপযুক্ত সমাধান উপস্থাপন করতে পারে।
৫ম দিন:
আপনার লেখা সমাধানটি বা পণ্যের পরিকল্পনাটি আপনার ব্লগে প্রকাশ করুন অর্থাৎ পিডিএফ ফাইলটি আপলোড দিন এবং সবাইকে ডাউনলোড করার সুযোগ দিন। তবে ডাউনলোডের আগে তাদের জন্য সেই প্রশ্নগুলো রাখুন যেগুলো আপনি আপনার নির্বাচিত ১০ জন বন্ধু বা প্রতিনিধিকে করেছেন। প্রত্যেকে যেন পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করার আগে প্রশ্নগুলো উত্তর জমা দিয়ে নেয়। এর মাধ্যমে আপনি যেমন তাদের সমাধান খুঁজতে সাহায্য করছেন তারাও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আপনাকে সমস্যাগুলো আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিচ্ছে। এই পর্যায়ে আপনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশের দ্বারপ্রান্তে আছেন। খুব শিঘ্রই বদলে যেতে পারে আপনার জীবন।
এবার আপনি কিভাবে পণ্য বা সেবা দিতে চান সেই মাধ্যমটি নির্বাচন করুন। এটি হতে পারে একটি ভিডিও, ইমেইল, বই, ছোট আর্টিকেল কিংবা অনলাইন চ্যাট/ ভিডিও কলের মাধ্যমে। আপনি আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যদের সমস্যার সমধান দিতে চাইলে, সেটিও একটি সেবা বলে গণ্য হবে। এই পর্যায়ে এসে আসলে আপনাকে আপনার সেবার ধরণটি চূড়ান্ত করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি এই বিষয়ে একটি বই লিখতে চান তাহলে আজই লেখা শুরু করতে হবে। এটি কয়েক পৃষ্ঠার একটি ছোট্ট পুস্তক বা হ্যান্ডআউটও হতে পারে, ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালানোর মতো বিশাল কোন বই লিখতে হবে না। কিংবা কোন সফটওয়্যার বা পণ্য তৈরি করতে চাইলে এটিকে এর ডেমো বা ব্যবহারের প্রাথমিক রূপ দিতে হবে। মনে রাখবেন, যেহেতু আমাদের হাতে সময় সাত দিন তাই আমরা মিনিমাম ভেল্যু প্রোডাক্টই তৈরি করবো। অর্থাৎ আমাদের সেবা বা পণ্যের আকার যত ছোটই হোক না কেন এটি যেন নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
৬ষ্ঠ দিন
এবার আপনার পণ্য তৈরি হয়ে গেলে সেটিকে নিয়ে ৫০০ শব্দের বা তার চাইতে ছোট একটি ব্লগ লিখে পণ্যটি প্রকাশের ঘোষণা দিন। এই ব্লগটিতে খুব সংক্ষেপে আপনার পণ্য বা সেবা কি কাজে ব্যবহার হবে বা কোন কোন সমস্যার সমাধান করবে সেটি আলোচনা করতে পারেন। এবার ব্লগের শেষে একটি পিডিএফ ফাইলে আপনার পণ্যটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ বা লেআউট যুক্ত করে দিন।
৭ম ও শেষ দিন
এবার আপনার পণ্য তৈরি হয়ে গেলে সবার জন্য সেটি উন্মুক্ত করুন!!! গত কয়েকদিনে লেখা পুরো ব্লগটি প্রকাশ করুন ও আপনার গ্রাহকদের পণ্য (বই, ভিডিও বা সফটওয়্যার) বা সেবা (পরামর্শ বা প্রশিক্ষণ) গ্রহণের সুযোগ করে দিন।
শুরু থেকে কিছু কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
প্রতিটি ব্লগ পোস্টে আলোচনার শেষে প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান উল্লেখ করতে ভুলবেন না। অর্থাৎ মনে করে পিডিএফ ফাইলটি যুক্ত রাখতে হবে। ফেসবুক, ইউটিউব আর টুইটারের মতো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লগগুলো শেয়ারও করতে পারেন। মনে রাখবেন যত বেশি মানুষের কাছে আপনি পৌঁছতে পারবেন, উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি ততটাই সফল। এবার আপনার পণ্যটি সঠিকভাবে বাজারজাত করার বা পরবর্তী ধাপে আগানোর উদ্যোগ নিন।
উদ্যোক্তাদের ভুবনে আপনাদের স্বাগতম!!! কে জানে, হয়তো একসময় চাকরির চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আপনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারেন।