The worst marketing award of the year goes to —

আপনি কি শূন্য টাকা খরচ করে একটা প্রিন্টেড কাগজকে লক্ষ লক্ষ্য মানুষের কাছে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবেন? না পারলে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করে বাকিটা পড়েন:

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ০.০১ পার্সেন্ট মানুষ রেজিস্টার্ড ট্যাক্স পেয়ার। এইটা যতটা না ইকোনোমিক কিংবা সামাজিক সমস্যা, তাঁর চাইতে বড় একটা মার্কেটিং ফেইলিউর।

কিভাবে? বোঝাই।

আপনি ঢাকার রাস্তা থেকে এলোপাথাড়ি ধরে এনে যদি একজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন যে উনি কেন ট্যাক্স দেন না, তবে উনার সহজ সরল উত্তর হবে যে ট্যাক্স দিয়ে কি লাভ? সব তো পুকুর চোরেরা খাবে। এরচেয়ে আমার টাকা আমিই খাই!

এবং উনি একদমই রাইট।

আপনার সামনে যদি ১ প্যাকেট বিস্কুট রেখে বলি, এই বিস্কুট আপনি চাইলে ২০০০ টাকা দিয়ে নিতে পারবেন, আবার চাইলে ফ্রি তেও নিতে পারবেন – উল্টো, ২০০০ টাকা দিয়ে নিতে চাইলে আপনাকে ৪ পেইজের একটা ফর্ম ফিলাপ করতে হবে, জুন মাসে একটা হোটেলের সামনে লাইনে দাঁড়াইতে হবে, আর একদিন প্যারা খাইতে হবে আপনার এই ক্রয়ের সার্টিফিকেট নিতে। আর অন্যদিকে ফ্রিতে নিলে কিছুই করা লাগবেনা। বাসায় বসে থাকবেন। টাকা ব্যাংকে না রেখে ফ্লাট-জমি কিনলেই হবে। বিস্কিট বাসায় পৌঁছে যাবে।

একটা মুরগি ও তো সেই বিস্কুট টাকা দিয়ে কিনবেনা – তাইনা?

এবং এইটাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সবচাইতে বড় মার্কেটিং ভুল।

কেন যেন মনে হয় যে উনারা একদিনের জন্যেও ভেবে দেখেন নাই যে উনারা একটা প্রোডাক্ট বিক্রি করেন। ট্যাক্স সার্টিফিকেট। মানুষ ঐটা টাকা দিয়ে কিনে। আর ভাবেন নাই বলেই সম্ভবত উনারা এই কাগজটার ভ্যালু বাংলাদেশের সবচাইতে বেহুদা বানিয়ে রেখেছেন।

চিন্তা করেন – ট্যাক্স থেকে কিছু সাধারণ সার্ভিস মানুষের পাওয়ার কথা। ছোটবেলায় ইকোনমিক্স পড়ানোর সময়ে খুব ছোট একটা এক্সাম্পল দিয়ে বুঝানো হয়েছিল যে একটা ক্যাপিটালিস্ট ইকোনোমিতে কেন রাস্তায় লাইট জ্বলবেনা। কারণ কেও রাস্তায় লাইট জ্বালানোর টাকা দিবে না। আপনি আশা করবেন যে আপনার পাশের বাড়ির বাড়িওয়ালা টাকা দিবে আপনাদের রাস্তায় লাইট জ্বালাতে, উনি আশা করবে আপনি। আর রাস্তায় গাড়ি চালকরা ভাববে যে আমার তো হেডলাইট আছেই, আমি কেন টাকা দিব একটা লাইট জ্বালাতে এইখানে? আর কোন বোকা মানুষ যদি রাজি হয়েও যায় লাইট জ্বালাতে, তবে তো আর চিন্তাই নাই, সবাই লাইট পাবে। অন্য কেউ আর ভেবেও দেখবেনা যে তাঁর এই লাইটের খরচ দেয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশের সমস্যা এই যে ০.০১% মানুষ আসলে ওই বোকাদের কাতারে দাঁড়ানো। উনারা লাইটের খরচ দেন। বাকিরা ফ্রিতে লাইট পাচ্ছেন বলে এইটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন না।

এইটা কোন প্রোডাক্ট এর ফল্ট না। এইটা মার্কেটিং এর ভুল।

রাজস্ব বিভাগ আসলে ট্যাক্স দেয়ার কোন ধরণের ভিসিবল ইনসেন্টিভ দেয়না মানুষকে। ন্যাশনাল লেভেলে আপনি ট্যাক্স দিলেও যা, না দিলেও তাই মনে হয়। গুটিকয়েক সরকারি কর্মকর্তা, ফিনান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রির কিছু মানুষ, আর কিছু ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেও ট্যাক্স দেয় কি না দেয়, তাতে তাঁদের জীবনে কোন পরিবর্তন আসেনা। হ্যাঁ, এইটা সম্ভব না যে আপনি শুধুমাত্র ট্যাক্স পেয়ারদের রাস্তায় লাইট দিবেন, আর বাকিদের দিবেন না। তবে অনেক ভাবেই ট্যাক্স পেয়ারদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।

যেমন ধরেন, কালকে সকালে যদি সরকার ডিক্লেয়ার দেয় যে কারেন্ট এর দাম বাড়বে ২০%, তবে শুধুমাত্র যারা রেগুলার ট্যাক্স দেয়না তাঁদের লাইনে, তবে আমি হলফ করে বলতে পারি যে ১ মাস পরে রাজস্ব বিভাগের সামনের রাস্তায় রাত ৩টা বাজে লাইন হবে। আপনার বাড়িওয়ালা ট্যাক্স দেয়না দেখে যদি আপনার কারেন্ট এর বিল ১৫০০ টাকা বেশি আসে, তবে আপনি নিজেই উনাকে গুতাবেন। সরকারের প্ররোচনা-প্রচারণা কিছুই লাগবেনা।

আবার ধরেন, যদি সরকার বলে দেয় যে ৫০% ট্রেনের টিকিট এখন থেকে শুধুমাত্র ট্যাক্স পেয়ারদের জন্য রিজার্ভ করা, তবে ১ বছর পর লাখ লাখ মানুষ ট্যাক্স জমা দিবে শুধুমাত্র এই সুবিধা পাওয়ার আশায়। আমি এইটা বলছিনা যে লাখ টাকা জমা না দিলে ট্রেনের টিকিট পাবেন না। এক টাকা না দিয়েও কিন্তু ট্যাক্স ফাইল করা যায়। সাধারণ মানুষ তখন নিজের থেকেই ফাইলিং করবে। আজকে যার শূন্য টাকায় ট্যাক্স ফাইল হবে, পাঁচ বছর পর একটা ডিজিটাইজ্ড ফিনান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রি একলাই উনাকে ট্যাক্স দিতে উদ্বুদ্ধ করবে। 

আপনি যদি কালকে বলে দেন যে বাংলাদেশের সকল সুপার স্টোরের একটা করে বিলিং কাউন্টার শুধুমাত্র ট্যাক্স পেয়ারদের জন্য আলাদা করে রাখা ম্যান্ডাটরি, তবে আগামী শুক্রবার তমাল সাহেবের স্ত্রী এগোড়া তে শপিং করতে যেয়ে খেয়াল করবেন যে সজীব সাহেবের স্ত্রী লাইনে না দাঁড়িয়েই শপিং করতে পারছেন। সামাজিকভাবে হেয় হবেন তিন ফ্ল্যাটের মালিক তমাল সাহেব, যাঁকে আপনি আর অন্য কোনভাবেই ছুঁতে পারতেন না।

আগামী সপ্তাহে যদি ডিক্লারেশন হয় যে এখন থেকে বাংলাদেশের সকল খেলার টিকিটের দাম ৫০০% বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র ট্যাক্স যাঁরা দেয়না উনাদের – তবে নেক্সট খেলার আগে ৪০,০০০ ছেলে মেয়ে আপনার হয়ে ট্যাক্সের মার্কেটিং করবে – ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবে, “ট্যাক্স পেয়ার কেও আছেন, আমাকে দুটো টিকেট কিনে দিবেন?”। ডিএসডি তে পোস্ট হবে, “ট্যাক্স পেয়ার খুঁজতে খুঁজতে হয়রান, কেও কি আছেন?”। আপনি কোন ধরণের খরচ ছাড়াই ট্যাক্স দেয়াকে একটা সম্মানী বিষয় হিসেবে পোর্টরে করতে পারবেন।

হয়তোবা একদিন সকালে হঠাৎ করে রাজস্ব বিভাগ তাঁদের ফেসবুক পেইজে পোস্ট দিতে পারে – “আইফোন এক্স এল, মাত্র ৩০,০০০ টাকায় বিক্রি হবে শুধুমাত্র দারাজে – অনলি অন ১১.১১ – শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড ট্যাক্স পেয়ারদের জন্য”। আসলে ত্রিশ হাজারে নাহয় বিক্রি হলো ১০০০ ফোন। কিন্তু তাতে আপনি সারা দেশের কম করে হলেও দশ লাখ ছেলে পেলের মাথা খেয়ে দিবেন। তাঁরা হন্য হয়ে আপনার মার্কেটিং করবে, “কেও কি আছেন, গত পাঁচ বছর টানা ট্যাক্স দিয়েছেন? একটা ফোন কিনে দেন, দশ হাজার টাকা লাভ দিবো আপনাকেও”। আসবে ট্যাক্স দেয়াতে লাভের অঙ্ক।

হঠাৎ নাহয় একটা ডিক্লারেশন হোল, যে যেই নাম্বার দিয়ে আপনি ট্যাক্স এর জন্য রেজিস্টার করেছেন, সেই নাম্বারে পাঠাও রেজিস্টার করা থাকলে আপনি আজ সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত পাবেন ৬০% ডিসকাউন্ট। দেখবেন হাজার হাজার মানুষ পোস্ট দিবে, “কেও কি আছেন, ট্যাক্স এর রিবেইট ডিসকাউন্ট পেয়েছেন কিন্তু ব্যবহার করবেন না?”। ট্যাক্স পেয়ার শুধু সরকারের কাছেই দুর্লভ থাকবেনা, সবখানেই মূল্যবান বস্তুতে পরিণত হবে।

পাবলিক ইউনিভার্সিটির সব স্টুডেন্টের কাছে প্রতি মাসে তাঁদের ট্যাক্স কার্ডের এগেইনস্টে মাসিক ৫০০০ টাকা ভার্সিটির বেতন আসতে পারে। বাৎসরিক ভার্সিটিকে শত কোটি টাকা অনুদান না দিয়ে সেই টাকাই স্টুডেন্ট এর হাতে তুলে দিয়ে দেখানো সম্ভব যে সরকার তাঁদের পেছনে কত খরচ করে। তখন তাঁরাই ট্যাক্স এর ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ হবে।

এমন অনেক কিছুই সম্ভব। ট্যাক্স পেয়ারদের আলাদা ব্লাড ব্যাংক থাকা সম্ভব। ট্যাক্স পেয়ারদের জন্য মাঠে ফ্রি ওপেন এয়ার জিম বানানো সম্ভব। গাড়িতে ট্যাক্স পেয়ার স্টিকার না থাকলে ফ্লাই-ওভারে টোল ডাবল করে দেয়া সম্ভব। এইচ এস সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময়েই ট্যাক্স কার্ড করা বাধ্যতামূলক করা সম্ভব।

খেয়াল করে দেখেন, এই একটাতেও সরকারের তেমন কোন সিগ্নিফিক্যান্ট খরচ নেই। এইগুলো সিম্পল মার্কেটিং গিমিক। গুটি কয়েক বুদ্ধিমান সচিব এক বছরের মধ্যেই এই সবগুলো ইমপ্লিমেন্ট করতে পারবেন তেমন কোন হাজার কোটি টাকার বাজেট ছাড়াই। শুধু সদিচ্ছা হলেই হবে।

আর তাতেই দেখা যাবে যে যেই কাগজটার ভ্যালু আজকে শূন্য টাকা, সেইটা ১ বছর পর লাখ টাকার সম্পদে পরিণত হয়েছে। আর সাথে সাথে মানুষের মনেও যে একটা প্রিজাম্পসন গেঁথে আছে যে আমার ট্যাক্সের টাকা তো পুরোটাই চুরি হয়, আমি কিছু পাইনা – তাঁর কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

মানুষকে বেনিফিট দিতে হবে। রাস্তার লাইট যদি মানুষ ট্যাক্স না দিয়েও পায়, তবে সে জীবনেও ট্যাক্স দিবেনা। আর তাই সরকারকে লাইটের কথা ভুলে অল্প একটু চালাক হতে হবে।

শূন্য টাকা খরচে একটা প্রিন্টেড কাগজকে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করা সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। এইখানে প্রোডাক্ট ইনোভেশন লাগবেনা, লাগবে কানিং কয়েকটা মার্কেটিং এর ব্রেইন।

** লেখনীতে অবশ্যই কিছু হাইপোথেটিক্যাল ভুল আছে। দয়া করে বুঝে নিবেন যে এইটা সিম্পল প্রুফ অফ কনসেপ্ট। কোন পিয়ার রিভিউ করা রিসার্চ পেপার না।