সময়মতো কাজ আদায় করাটা প্রত্যেক ম্যানেজারের জন্যেই চ্যালেঞ্জিং। একের পর এক ডেডলাইন দিয়েও অনেক সময় কাজ আদায় করা যায় না। অনেক সময় কর্মীরা ঢিলেমি করেন কিংবা কৌশলে দায়িত্ব এড়িয়ে যান। তবে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে কেউ যদি কাজে ফাঁকি দেয় তাহলে তাকে বের করা খুব একটা কঠিন কাজ না। তারপরেও আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হয়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন প্রতি সপ্তাহে মিটিং শেষে দেখবেন কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে যেটা কেউ করতে চায় না। হয়তো প্রত্যেক মিটিংয়ে আপনি ঐ একটি কাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন কিন্তু কোনভাবেই কাজ হচ্ছে না। হয়তো কাজটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বা সময়মতো শেষ করতে না পারার পেছনে আপনার কর্মীদের গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু ম্যানেজার হিসেবে কাজটি আদায় করাও কিন্তু আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার কর্মীদের আরও নিখুঁতভাবে নির্দেশনা দিতে হবে কিংবা কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে চেষ্টা করতে হবে কিন্তু অনেকক্ষেত্রে সেসব টেকনিক কাজে নাও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি?
অনেকভাবেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত কাজ আদায় করতে পারেন। তবে সেটির জন্যে জোরজবরদস্তি না করে কৌশলী হওয়াটা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে এই পাঁচটি উপায়ে আপনি কর্মীদের যেকোন কঠিন কাজ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারেন।
সমস্যার মূলে যান, ঠিক কি কারণে কাজ আগাচ্ছে না সেটি খুঁজে বের করুন
হয়তো নির্দিষ্ট কোন একটা পদক্ষেপের জন্যে আপনার সেই মহামূল্যবান কাজটি আটকে আছে। সেটা হতে পারে একটা ফোন কল, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি – যার জন্যে দলের অন্য সদস্যরা এগোতে পারছেন না, একটা জরুরি মিটিং কিংবা কাজের সঠিক পরিকল্পনা। এই নির্দিষ্ট ঘটনা যেটি কাজের মোড় ঘুরিয়ে দেয় তাকে ইংরেজিতে বলা হয় ট্রাঞ্জিশন পয়েন্ট। তাই কাজ আগাতে হলে আপনাকে বুঝতে হবে এর ট্রাঞ্জিশন পয়েন্টটা কোথায়। তাহলেই আপনি ধরে ফেলতে পারবেন কেন কাজটি এগোচ্ছে না। এরপর প্রয়োজন বুঝে পদক্ষেপ। প্রয়োজনে ফোন করে আপনার দলের কর্মীদের খোঁজখবর নিন, কাজে উৎসাহ দিন। আরেকটা মিটিং করে কাজের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করুন, সবার মতামত নিন, নতুন করে পরিকল্পনা করুন কিংবা কেউ কাজ করতে অনাগ্রহী হলে তার সমস্যা কোথায় জানার চেষ্টা করুন, লাগলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। কর্মীদের নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে তাগাদা দিন।
কর্মীদের মনোযোগ যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন
অফিসের পরিবেশ কাজের ফলাফল নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্মীদের কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলে তাদের মনোযোগ নানাভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা বিপর্যস্ত হতে পারেন। তাই যেকোন কাজ শুরু আগে নিশ্চিত করুন যেন অফিসে কাজ করার জন্য আদর্শ পরিবেশ থাকে। অফিসের পরিচ্ছন্নতা আর অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করুন। কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সুবিধা অসুবিধার দিকগুলো জানার চেষ্টা করুন। কাজ শেষ করতে বা অফিসের পরিবেশ ভালো রাখতে কি করা যেতে পারে সে ব্যাপারে তাদের মতামত নিন। অতিরিক্ত শব্দ কিংবা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ অনেক সময় কাজে বাধা সৃষ্টি করে। তাই প্রয়োজনে ডেস্কে হেডফোন যুক্ত করুন যাতে কর্মীরা অবসাদ কাটাতে গান শুনতে পারেন। ইন্টারনেট সংযোগসহ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মান যাচাই করুন। সবশেষে কাজের কথা বলার জন্য উপযুক্ত সময় নির্বাচন করুন। এমন সময় কাজের কথা বলুন যখন কর্মীরা কাজে আগ্রহী থাকে। চট করেই যেন সবাই কাজ শুরু করতে পারে। এতে করে তারা সহজে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন এবং আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
কর্মীরা কোন সময় কাজ করতে পছন্দ করে সেটি জানার চেষ্টা করুন
সবাই যেমন সব কাজ পারে না তেমনি সবসময় সব কাজ হয় না। একইভাবে সবার কাজ করার পদ্ধতিও এক না। প্রত্যেকেরই কাজ করার একটি নিজস্ব ধরণ আছে, গতি আছে। দিনের সবটা সময় কাজের গতি এক থাকে না। অনেক সময় কর্মীরা ক্লান্ত থাকেন, আবার অনেক সময় উৎফুল্ল থাকেন। যে সময়টায় তার কাজের দক্ষতা সবচেয়ে বেশি থাকে সেই পর্যায়কে বলা হয় আল্ট্রাডিয়ান সাইকেল। অর্থাৎ ঐ সময়টাতে তিনি আপনার মোবাইলের ব্যাটারির মতো ফুল চার্জে আছেন। এটা দিনের শুরুতেই হবে এমন নাও হতে পারে, লাঞ্চের পরও হতে পারে বা যেকোন সময় হতে পারে। তাই আল্ট্রাডিয়ান সাইকেল বুজতে কর্মীদের কাজের ওপর বিশেষ নজর রাখুন। দিনের কোন সময় কর্মীরা কাজে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে পারে কিংবা কাজ করার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে সে ব্যাপারে খোঁজ নিন। আর আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভারটি সময় বুঝে অর্পণ করুন। তাহলে উভয়পক্ষের জন্যেই কাজ করা সহজ হয়ে যাবে।
কর্মীদের নেতিবাচক মনোভাব থেকে দূরে রাখুন
অনেক সময় কাজ করতে করতে কর্মীরা হাল ছেড়ে দেন কিংবা এক কাজ বারবার করতে করতে হতাশ হয়ে যান, আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই সবসময় তাদের নেতিবাচক মনোভাব থেকে দূরে রেখে কাজে উৎসাহী ও প্রফুল্ল রাখতে হবে। কর্মীদের চাপ নিতে ও মানসিকভাবে শক্ত হতে সাহায্য করতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সিলিং কিংবা বিশেষ ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি প্রতিষ্ঠানকে যত্নশীল হতে হবে।
বড় কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলুন
কাজের আকার অনেক সময় কাজ শুরুর ক্ষেত্রেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বড়সড় কাজ দেখলে অনেকেই সাহস করে দায়িত্ব নিতে চান না। ফলে কাজ সহজ হলেও ব্যাপারটা বনের বাঘে খায় না কিন্তু মনের বাঘে খায় টাইপের হয়ে যায়। তাই সুযোগ পেলে যে কেউই এই কাজ এড়িয়ে যেতে চায়। অতএব কাজটি যথাসময়ে শেষ করতে চাইলে সেটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। তারপর একেক অংশের দায়িত্ব আলাদাভাবে বন্টন করুন। একজনের উপর পুরো দায়িত্ব বা দিয়ে একেক জনকে একেক অংশের দায়িত্ব দিন। পুরো কাজ শেষ করার জন্য একটি সময় ঠিক না করে না দিয়ে প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা আলাদা ডেডলাইন নির্বাচন করুন। সবাইকে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন আর সময়মতো প্রত্যেক অংশের কাজ বুঝে নিন।
এক কাজ নিয়ে বেশিদিন সময় নষ্ট করাটা সত্যিই বিরক্তিকর এবং এর পরিণতিও ভয়াবহ। তবে পরিকল্পনামাফিক কাজ আগাতে পারলে দেখবেন যেকোন বড় কাজও অনায়াসে শেষ করে ফেলা যাবে।